সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আকাশ জুড়ে শ্রাবণের কালো মেঘ ছেয়ে আছে।আমার সামনের দিকে চুল গুলা বেশ বড়।একটু পর পর দমকা বাতাসে আমার সামনের চুল গুলা উড়ছে।মনে হচ্ছে খুব জোড় বৃষ্টি হবে।আবার ঝড়ের আভাস বেশ ভালো মতোই টের পাচ্ছি আমি।কিছু একটা ভাবতে ইচ্ছা করছে আমার। কিন্তু মাথা একদম ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে।
এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।তবুও অন্যমনস্ক হয়ে
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি।আকাশে মেঘের গর্জন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।মূহুর্তের মধ্যেই আমার সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিলো শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টি।
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।আমার কাঁধে হাত দিতেই আমি খানিকটা চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিলাম।চোখ মেলে দেখি আমার সামনে পুষ্পিতা দাঁড়িয়ে।বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম পুষ্পিতার দিকে।
পুস্পিতা আমার কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ছাদের রেলিংটা ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
বৃষ্টির গতি খানিকটা কমে গেলে আমি বাসার ভিতরে চলে গেলাম।আমার পিছুপিছু পুষ্পিতাও ছাদ থেকে নেমে আসলো।
ড্রয়িংরুমে পুস্পিতার লাগেজটা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।মাস পাঁচেক হলো আমার বাবা মারা গেছেন।উনার ব্যবসা এখন আমার বড় ভাই দেখে। ভাইয়া বিবাহিত।ভাইয়া ফ্যামিলি নিয়ে নিচ তলায় থাকে।আর আমি দোতলাতে একাই থাকি।বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর আমি বাসায় এসে উঠেছি।এই বাসার ছেলে হলেও আমার কারোর সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলোনা।মা মারা যাওয়ার পরে একেবারেই বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।মা বেঁচে থাকাকালীনও আমি বাসায় খুব একটা আসতাম না।বড় ছেলেকে সামলাতে সামলাতে কখন যে ছোট ছেলে অনেকটা পিছিয়ে গেছে সেটা তারা খেয়ালই করেনি।আর যখন খেয়াল করেছে তখন পারিবারিক বন্ধন থেকে একেবারেই ছিটকে পরেছিলাম।পরে যখন বাবা মারা গেলো তখন ভাইয়া নিজে গিয়ে আমাকে নিজের বাসার দায়িত্ব নিতে বলে।আর ব্যবসায় থেকে যা প্রফিট আসে মাস শেষে সেইটার অর্ধেক আমার এক্যাউণ্টে জমা করে দেয়।অনার্স কম্পলিট করেছি মাস দুয়েক হলো।
বুয়া এসে রান্না আর কাপড় গুলা কেঁচে দিয়ে যায়।বই পড়া, মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে যাওয়া,পরিচিত কারোর সাথে দেখা হলে ধোয়া ওঠা গরম চায়ের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা সব মিলিয়ে এভাবেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলছিলো আমার দৈনন্দিন জীবন…